স্পোর্টস ডেস্ক
প্রতিপক্ষের আক্রমণের ঢেউয়ে ভেসে যাওয়ার জোগাড় হলো বায়ার্ন মিউনিখের। তবে দিক হারাল না তারা, শান্ত থেকে ঘর সামলাতে থাকল। দ্বিতীয়ার্ধে জেগেও উঠল, শুরু করল পাল্টা আক্রমণ। আলফুঁস ডেভিসের অসাধারণ গোলে জাগাল দুর্দান্ত এক জয়ের সম্ভাবনা। তখনই অমার্জনীয় এক ভুল করে বসলেন শত পরীক্ষায় বিজয়ী মানুয়েল নয়ার। এরপর রেয়াল মাদ্রিদকে আর ঠেকায় কে? আড়াল ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা হোসেলুর হাত ধরে আরেকটি প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠল কার্লো আনচেলত্তির দল। সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে বুধবার রাতে সেমি-ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ২-১ ব্যবধানে জিতেছে রেয়াল, তাদের দুটি গোলই করেন বদলি ফরোয়ার্ড হোসেলু। দুই লেগ মিলিয়ে তাদের জয় ৪-৩ গোলে। প্রথম লেগ হয়েছিল ২-২ ড্র। পুরো ম্যাচে বল দখলে আধিপত্য করা রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নরা আক্রমণেও ছড়ি ঘোরায়। গোলের উদ্দেশ্যে তাদের ১৯টি শটের মধ্যে সাতটি ছিল লক্ষ্যে। আর বায়ার্ন আট শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পারে পাঁচটি। আক্রমণাত্মক রেয়াল, কিছুটা রক্ষণাত্মক বায়ার্ন-শুরুর চিত্র ছিল এমনই। ষষ্ঠ মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগটি পায় স্বাগতিকরা; তবে দানি কারভাহালের গোলমুখে বাড়ানো বলে প্রয়োজনীয় টোকাটা দিতে পারেননি কেউ। পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণে অন্যপাশে ভীতি ছড়ায় বায়ার্ন, তবে সের্গে জিনাব্রির দূরের পোস্টে বাড়ানো বলে শট নেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না। ত্রয়োদশ মিনিটে মুহূর্তের ব্যবধানে দুবার হতাশায় পুড়তে হয় রেয়ালকে। প্রথমবার ভিনিসিউস জুনিয়রের শট গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও পোস্ট এড়াতে পারেনি। ফিরতি বল ছয় গজ বক্সে পেয়ে শট নেন রদ্রিগো, এবার দারুণ ক্ষিপ্রতায় রুখে দেন নয়ার। ২৩তম মিনিটে সতীর্থের পাস ধরে একজনকে কাটিয়ে ডান দিক দিয়ে আক্রমণ শাণান রদ্রিগো। বাইলাইনের কাছ থেকে ডি-বক্সের মাঝে খুঁজে নেন স্বদেশি ফরোয়ার্ডকে; কিন্তু ভিনিসিউস বল নিয়ন্ত্রণেই নিতে পারেননি। প্রতিপক্ষের প্রবল চাপে সেভাবে আক্রমণেই উঠতে পারছিল না বায়ার্ন। প্রথম ২০ মিনিটে রেয়াল যেখানে গোলের জন্য চারটি শট নিয়ে দুটি লক্ষ্যে রাখে, সেখানে বায়ার্ন এই সময়ে পারেনি কোনো শট নিতেই। কঠিন এই অবস্থার মধ্যেই ২৬তম মিনিটে বড় একটা ধাক্কা খায় বায়ার্ন। চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন জার্মান ফরোয়ার্ড সের্গে জিনাব্রি। বদলি নামেন ডেভিস। ২৮তম মিনিটে প্রথম শটেই গোল পেতে পারতো সফরকারীরা। বক্সের বাইরে থেকে জোরাল নিচু ভলি করেন হ্যারি কেইন, ঝাঁপিয়ে এক হাত দিয়ে বল বাইরে পাঠান আন্দ্রি লুনিন। ৪০তম মিনিটে আবারও নয়ারের নৈপুণ্যে বেঁচে যায় বায়ার্ন। বক্সের বাঁ দিক থেকে ভিনিসিউসের বাঁকানো শটে বল সবাইকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যেই ছিল, শেষমুহূর্তে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান জার্মান গোলরক্ষক। বিরতির পর খেলা শুরু হতেই আক্রমণে রেয়াল। বাঁ দিক দিয়ে ভিনিসিউস বক্সে ঢুকে ছয় গজ বক্সের মুখে ফেদে ভালভেরদের উদ্দেশ্যে বল বাড়ালেন, তার আগেই প্রতিহত করলেন এরিক ডায়ার। পরের মিনিটে বিপদে পড়তে পারতো রেয়াল, পাল্টা আক্রমণে ডেভিসের শটে কারভাহালের পায়ে লেগে বল উঁচু হয়ে ক্রসবার ঘেঁষে উপরের জালে পড়ে। প্রথম ৪৫ মিনিটে রেয়াল আক্রমণে একচেটিয়া আধিপত্য করলেও, দ্বিতীয়ার্ধে পাল্টে যায় চিত্র। সমানতালে আক্রমণ হতে থাকে দুই পাশেই। ৫৩তম মিনিটে কেইনের আরেকটি প্রচেষ্টা ঝাঁপিয়ে রুখে দেন লুনিন। দুই মিনিট পর ভিনিসিউসের পাস গোলমুখে পেয়ে ফ্লিক করেন রদ্রিগো, দূরের পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায় বল। খানিক বাদে দারুণ দুই সেভ করে জাল অক্ষত রাখেন নয়ার। ৫৯তম মিনিটে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে রদ্রিগোর রক্ষণপ্রাচীরের ওপর দিয়ে নেওয়া ফ্রি কিক ঝাঁপিয়ে ঠেকান জার্মান গোলরক্ষক। পরের মিনিটে তিনি ভিনিসিউসের জোরাল শট অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় কর্নারের বিনিময়ে রুখে দেন। ৬৬তম মিনিটে দারুণ সুযোগ তৈরি করে বায়ার্ন। বক্সে কারভাহালকে কাটিয়ে জোরাল শট নেন জামাল মুসিয়ালা, দারুণ নৈপুণ্যে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন লুনিন। এর দুই মিনিট পরই রেয়ালকে স্তব্ধ করে দেয় জার্মান দলটি। পাল্টা আক্রমণে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন ডেভিস, আন্টোনিও রুডিগারকে কাটিয়ে জায়গা বানান। বাধা দিতে ছুটে আসেন কারভাহাল, দুই ডিফেন্ডারের মধ্যে দিয়ে জোরাল কোনাকুনি শটে দূরের পোস্ট দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন কানাডার ফরোয়ার্ড ডেভিস। ইউরোপ সেরার মঞ্চে এটাই ডেভিসের প্রথম গোল। পিছিয়ে পড়ার পরপরই একসঙ্গে দুটি পরিবর্তন করেন রেয়াল কোচ; টনি ক্রুসের বদলি লুকা মদ্রিচ এবং অহেলিয়া চুয়ামেনির জায়গায় এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গাকে নামান। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি কর্নারের ফলশ্রুতিতে জালে বল পাঠিয়ে সমর্থকদের উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছিল রেয়াল। তবে বল জালে যাওয়ার আগ মুহূর্তে জসুয়া কিমিখকে মুখে ধরে নাচো ফের্নান্দেস ফেলে দেওয়ায় স্বাগতিকদের উল্লাস থেমে যায়, ভিএআরের সাহায্যে গোল দেননি রেফারি। ৭৬তম মিনিটে ব্যবধান বাড়তেও পারতো; তবে কেইনের বাঁ পায়ের জোরাল শট পাশের জাল কাঁপায়। খানিক বাদে আবারও দ্বিতীয় গোল খাওয়া থেকে বেঁচে যায় রেয়াল। নির্ধারিত সময় শেষ হতে যখন আর মাত্র মিনিট দুয়েক বাকি, তখনই অবিশ্বাস্য ভুলটি করে বসেন তারকা গোলরক্ষক নয়ার। ভিনিসিউসের সোজাসুজি দুর্বল শট ঠেকাতে গিয়ে তালগোল পাকান তিনি, আর ছুটে এসে আলগা বল জালে পাঠিয়ে দেন ৮১তম মিনিটে ভালভেরদের বদলি নামা হোসেুল। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটেই দলকে জয়ের সুবাস পাইয়ে দেন মৌসুমের শুরুতে এস্পানিওল থেকে ধারে বের্নাবেউয়ে পাড়ি জমানো হোসেলু। বাঁ দিক থেকে রুডিগারের ছয় গজ বক্সের মুখে বাড়ানো বল দারুণ এক টোকায় জালে পাঠান স্প্যানিশ স্ট্রাইকার। উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো বের্নাবেউ। এরপরও বায়ার্নের ঘুরে দাঁড়ানোর যথেষ্ট সময় অবশ্য ছিল, যোগ করা সময় ৯ মিনিট দিলেও নানা বিঘ্নতায় শেষ পর্যন্ত ঘড়ির কাঁটায় ১৫ মিনিটে গিয়ে ঠেকে। কিন্তু বায়ার্ন আর পারেনি ঘুরে দাঁড়াতে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে রেকর্ড ১৫তম শিরোপার লক্ষ্যে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের মুখোমুখি হবে রেয়াল মাদ্রিদ। আগামী ১ জুন লন্ডনের ওয়েম্বলিতে হবে ফাইনাল।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
